আজ, শুক্রবার | ৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | সকাল ৭:১১

ব্রেকিং নিউজ :
শ্রীপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী রাজন-সংগ্রামের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ জমে উঠেছে শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচন মাগুরায় জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উদযাপন বৃষ্টির প্রার্থনায় নামাজ পড়ে কাঁদলেন শ্রীপুরের মুসল্লিরা মহম্মদপুরে সড়ক দূর্ঘটনায় শিক্ষকের মৃত্যু মাগুরায় প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ মাগুরায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন জাহিদুর রেজা চন্দন ও নবীব আলী মহম্মদপুরে চেয়ারম্যান পদে ৯ জন শালিখায় ৫ জনের মনোনয়ন পত্র জমা স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান স্মৃতির আয়নায় প্রিয় শিক্ষক কাজী ফয়জুর রহমান

আদি বাড়ি যেখানে জন্মেছেন বঙ্গবন্ধু

মাগুরা প্রতিদিন ডটকম : বাংলাদেশের অজ পাড়া গাঁ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া। আর এখানেই জন্মেছেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান।  স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত এই নেতা ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মেছেন এই গ্রামে।

শৈশবের দুরন্ত মুজিব টুঙ্গিপাড়ার গ্রামে শেখ লুৎফর রহমান ও শায়েরা খাতুনের ঘরে জন্ম নেন। বাবা মা আদর করে ডাকতেন খোকা। সেই খোকাই হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তিনি বাড়ির পাশে গিমাডাঙ্গা স্কুলে ভর্তি হন ১৯২৭ সালে। সেখানে লেখাপড়া করেন তিন বছর। এরপর কৈশোরে তিনি গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর থাকতেন। বাড়ি আসলে সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতেন বঙ্গবন্ধু। গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না ছুঁয়ে যেতো কিশোর মুজিবের মন। জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা নিপীড়নের বিরুদ্ধে তাই সেই বয়সেই রুখে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি।

শেখ পরিবার সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর যে বাড়িতে কেটেছে। সেই বাড়িটি এখন জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক ইতিহাসের সাক্ষীও এ বাড়িটি। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দাফন করা হয় এই বাড়িতেই। যেখানে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাবা-মায়ের কবর। ৭৫ পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন অবহেলিত থাকে বাড়িটি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বাড়িতে ঘিরে সমাধি সৌধ নির্মাণ করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, ‘প্রায় সাড়ে ৩শ’ বছর আগে বঙ্গবন্ধুর পূর্বপুরুষ জমিদার শেখ কুদরতউল্লা টুঙ্গিপাড়ায় সেগুন কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন কারু কাজের ১২টি পিলারে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন। এ বাড়িটি তখন এ অঞ্চলের মধ্যে অনন্য স্থাপত্যশিল্প হিসেবে পরিগণিত হতো। এ অঞ্চলে আগত মানুষ বাড়িটির নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ হতেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব থেকে শুরু করে জীবনের অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে এই বাড়ির সঙ্গে।

তারা জানান, বঙ্গবন্ধু’র আদি পূর্বপুরুষেরা জমিদার ছিল। বঙ্গবন্ধু যে বাড়িতে জন্মেছেন, সেটি এখন সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স এর মধ্যে রয়েছে। যদিও পুরনো সেই বাড়ি-ঘর নেই। সেখানে এখন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে, বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর ও রাজনীতি সবই এই বাড়ি ঘিরে। বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় আসলে এই বাড়িতে অবস্থান করেন।

এক সময়ের বাড়ির আঙিনা, গোয়ালঘর, মাঠ এখন জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্স। প্রায় ৩৮ একর জমি উপরে গড়ে তোলা হয়েছে এই কমপ্লেক্স। বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান এখন যেমন দেখা যাচ্ছে, তখন এমন ছিল না। বঙ্গবন্ধুর বাবার অনেক জমি-জমা ছিল। এই সমাধি কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে তখন ছিল বড় একটি শাল কাঠের টিনের চৌচালা ঘর। ওই টিনের ঘরেই ওনার (বঙ্গবন্ধু’র) জন্ম। বঙ্গবন্ধু’র অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে তিনি এটি লিখে গেছেন। এছাড়া এখানে কাচারি ঘর, গোয়াল ঘর, খড়ের পালা ও বড় উঠান ছিল। বঙ্গবন্ধু যে বড় নেতা হবেন, সেটি ছোটবেলা থেকেই বোঝা যেত।

শেখ পরিবারের নিকট আত্মীয় শেখ আহম্মেদ হোসেন মির্জা বলেন, শৈশব থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম করতে শিখেছেন বলেই জীবনে কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করেননি জাতির জনক শেখ মুজিব। মানুষ বিপদে পড়লে ঝাঁপিয়ে পড়তেন বঙ্গবন্ধু। কেউ বিপন্ন হলে অবস্থা সম্পন্নদের পাশে দাঁড়াতে বলতেন। কেউ অভাব অনটনে পড়লে নিজেদের বাড়ির গোলার সব ধানও বিক্রি করে সাহায্য করতেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতার রাজনীতি শুরু এই বাড়ি থেকেই। বঙ্গবন্ধু সব সময় বাবা-মায়ের দোয়া নিয়ে চলতেন। রাজনীতি করতে পরিবারের সহযোগিতা পেতেন। এই সমাধি কমপ্লেক্স দেখে হয়তো বঙ্গবন্ধু’র পুরনো বাড়ির ঘরের স্মৃতি বোঝার উপায় নেই। তবে এই মাটিরই সন্তান শেখ মুজিব। এখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত হিজলতলা, খেলার মাঠ, বড় তালাব, ছোট তালাব, খেয়াঘাটসহ নানা স্থান সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

পাশের শ্রীরামকান্দি গ্রামের শতবর্ষ পার করা আব্দুল হামিদ জানান, বঙ্গবন্ধু তাকে বড় ভাই ডাকতেন। তিনি ছিলেন শেখ মুজিবের থেকে প্রায় ১০ বছরের বড়।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই মিশুক ছিলেন খোকা, খেলাধুলা করতেন। প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। খেলতেন হাডুডুও। শিশু শেখ মুজিবের শৈশবের পুরোটাই কেটেছে মেঠো পথের ধুলোবালি মেখে আর বর্ষার কাদা পানিতে ভিজে। সামনে আসা যেকোনো সংকট তিনি মোকাবিলা করতেন নিজের বুদ্ধিতে, শক্ত হাতে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হলে তিনি মিটমাট করতেন দায়িত্ব নিয়ে।

তিনি মনে করেন, বঙ্গবন্ধু সৃষ্টিকর্তার বিশেষ দান ছিল, তা না হলে এই অজোপাড়া গাঁ থেকে এত বড় নেতা হওয়ার কথা নয়।

জাতির পিতার সমাধি সৌধ কমপ্লেক্সের সহকারী কিউরেটর নুরুল ইসলাম বলেন, জাতির পিতার জন্মভিটার স্মৃতি সংরক্ষণে নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।  ধাপে ধাপে সব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন...




©All rights reserved Magura Protidin. 2018-2022
IT & Technical Support : BS Technology